বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছিল তারা

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছিল তারা

স্বদেশ ডেস্ক: ঘাতকরা জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে একটি ইতিহাসকেই মুছে দিতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি শুধু একটি পরিবারকে হত্যা নয়, এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা একটি ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা এদেশের প্রতিটি আন্দোলনে জাতির পিতার যে অবদান তা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেত না। ৭ মার্চের ভাষণ কোথাও বাজানো যেত না। তখন কেবল বিটিভি ছিল। কোথাও কোনো সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর নাম থাকলে সাদা দাগ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির সভাপতি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেন কারবালার মর্মান্তিক ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটল ধানম-ির ৩২ নম্বরে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ১৫ আগস্টের খুনিদের মদদ দিয়েছে। যেভাবে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল, সেভাবে খালেদা জিয়াও পুনর্বাসন করেছেন। এরশাদও খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন। তিনি আরও বলেন, দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে জড়িত ছিল, তারাও পরে জিয়ার সঙ্গে গেছে, মোশতাকের সঙ্গে গেছে। অনেকে এখনো বেঁচে আছে, যারা বড় বড় কথাও বলে।
গুমের শুরুটাই জিয়াউর রহমান করেছিলেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিএনপি নেতারা

নতুন সাফাই গাইতে শুরু করেছে। তারা বলছে, ’৭৫ সালে তো বিএনপি গঠনই হয়নি তা হলে বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিএনপি কীভাবে জড়িত হলো? কিন্তু বিএনপির যে প্রতিষ্ঠাতা, সেই জিয়াউর রহমান নিজেই খুনি। জিয়াউর রহমান শুধু খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল না, এই হত্যার বিচার হবে না সেই ব্যবস্থাও করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ে যারা জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ডালিমসহ অন্যদের যখন বিদেশে পাঠানো হলো অনেক দেশ তাদের গ্রহণ করেনি। যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পক্ষে ছিল, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কূটনীতিক হিসেবে মেনে নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ওই সময়ে যারা কয়েদি ছিল তারা বলতে পারবে, একেক রাতে ৮ জন-১০ জন করে জোড়ায় জোড়ায় ফাঁসি দিয়েছে। তাদের কান্নায়-চিৎকারে আকাশ ভারী হয়ে উঠত। আর এখন সেই বিএনপি গুম, খুনের কথা বলে! তিনি আরও বলেন, তাদের চরিত্রই তো খুনের, যেটা দেখা গেছে (২০০৪ সালের) ২১ আগস্টে। জিয়ার ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। তা হলে তো বিএনপির জš§ই অবৈধ হয়ে যায়। যারা খুনিদের পুরস্কৃত করে, তারা খুনিদের দল হবে না কেন? এরা খুনির দল ছাড়া আর কী। তাদের জš§ হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে।
জিয়াউর রহমান খন্দকার মোশতাকের সহযোগী ছিলেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটা ঠিক আমার বাবার ক্যাবিনেট মিনিস্টার থেকে অনেকেই এটার সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের সহযোগী ছিল জিয়াউর রহমান। জিয়া যে মোশতাকের একান্ত সহযোগী এটাতে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ যাকে সব থেকে বিশ্বস্ত মনে করে তাকেই সেনাপ্রধান করা হয়। জিয়া যদি এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকত তা হলে মোশতাক কখনই তাকে সেনাপ্রধান করত না।
বেইমানের পরিণতি ভালো হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, অথচ কদিন পরই মোশতাককে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। যেমনটা ছাড়তে হয়েছে মীরজাফরকেও। সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর মীরজাফরকেও কয়েক দিনের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনীর শত শত অফিসারকে জিয়া হত্যা করেছিল। অনেকে হয়তো ছুটি থেকে জয়েন করেছে তাদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে হয়তো জানতেও পারেনি তাদের কেন হত্যা করা হচ্ছে, ডিফেন্ড করার সুযোগ দেওয়া হয়নি; গুলি করে হত্যা করেছে-ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। শোনা যেত জিয়া নাকি কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে খেতেই মৃত্যুদ-ের ফাইলে সই করত। জাতির জনকের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধেও সেনাবাহিনীর অফিসারদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এমন অনেককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গেছে আর বাড়িতে ফিরে আসতে দেওয়া হয়নি। এ রকম আওয়ামী লীগের কত নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে, গুম করেছে, যা বলে শেষ করা যাবে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ আছে। কোনো রাজনীতিবিদ যদি সফল হতে চায় তাকে অবশ্যই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। রাজনীতিতে দুটি পথ আছে। একটি হলো- মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস অর্জন করা। আরেকটা হচ্ছে- আদর্শহীন, নীতিহীন রাজনীতি করে অর্থ ইনকাম করা। এই পথে যারা যায় তারা এক সময় হারিয়ে যায়, এটাই বাস্তবতা। তাই সবাইকে অনুরোধ করব জাতির পিতার নিজের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনীটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সেখানে অনেক শেখার আছে।
আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ফের ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করতে শুরু করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য বঙ্গবন্ধু আত্মত্যাগ করে গেছেন। আমরা তার আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। যে কাজটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল আমি মনে করি সেটা বাস্তবায়ন করা আমার দায়িত্ব। জনগণের জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর জন্য আমাকে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে।
আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রহমতউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আখতার হোসেন ও আজিজুল হক রানা। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877